গত ডিসেম্বর মাসে কলকাতা গিয়ে প্রথম উবার-এ উঠেছিলাম।
জুলাই মাসে যখন গিয়েছিলাম তখন টেক্সিতে করেই ঘুরেছিলাম। তখন অবশ্য উবার সম্পর্কে জানতাম না।
আর ডিসেম্বরে যখন সেখানে যাই ততদিনে ঢাকাতে উবার চালু হয়ে গেছে।
প্রথমদিন আমরা টেক্সিতে করেই ঘুরেছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম কলকাতাতে উবার আছে।
আমরা গিয়েছিলাম চারজন। এর মধ্যে রাজ্জাক ভাই এবং রেদওয়ান-এর উবার অ্যাপস ডাউনলোড করা ছিলো এবং রেজিশট্রেশনও করা ছিলো।
রাজ্জাক ভাই বললেন, উবার ট্রাই করে দেখতে পারি।
কথা মতো কল করা হলো। ভাড়া উঠলো। এবং সাথে সাথে ড্রাইবারের নাম এবং গাড়ির নাম্বারও দেখালো।
নিচে ড্রাইবারের সাথে কথা বলার জন্য কন্টাক্ট অপশনও রয়েছে। সাথে সাথে রাজ্জাক ভাই ফোন দিয়ে ড্রাইবারের সাথে কথাও বলে নিলেন।
মোবাইল স্ক্রীনে গাড়ি কোথায় আছে, কোন রাস্তা দিয়ে আসছে, কতো দূরে আছে, আর কতো মিনিট লাগবে তা প্রতি মুহূর্তে আপডেট দিতে থাকে।
তারপরও ফোন দেওয়ার কারন হলো, রাজ্জাক ভাই যে নাম্বার দিয়ে উবারে রেজিস্ট্রেশন করেছেন সেটা বাংলাদেশের নাম্বার। ড্রাইবার যদি কোন কারনে ফোন দেয় তাহলে আমাদের পাবেনা। তাই ফোন দিয়ে কনফার্ম করেছেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি চলে আসলো। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। ড্রাইবারের ব্যবহার ভালো। এসি অন করে দিলেন। সকাল আটটা বাজে। এখনো তেমন ভিড় লাগেনি। যারা অফিসে যাবেন তারা এখনও বের হননি। তাই ফাকাই ছিল রাস্তা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছে গেলাম।
ভাড়া ছিয়াত্তর রুপি।
আমরা উবার কল করার সাথে সাথেই এই ভাড়া দেখিয়েছিলো। জ্যাম থাকলে ভাড়া যা দেখায় তার থেকে বেশি হয়ে থাকে। রুপি দিয়ে আমরা খুশি মনে নেমে গেলাম।
অথচ গতকাল আমাদের এখানে আসতে টেক্সি দেড়শো রুপি নিয়েছিলো। আসার সময়ও একই ভাড়া দিয়েছিলাম।
আর উবারে এখন অর্ধেক কমে আসতে পেরে আমরা সবাই অনেক খুশি। সিদ্ধান্ত নিলাম এর পর থেকে আমরা কলকাতাতে যে কয়দিন আছি উবারেই চলবো।
কলকাতাতে টেক্সি মিটারে খুব একটা যেতে চায়না। ভাগ্য ভালো থাকলে পাওয়া যেতে পারে। মিটারে গেলে ভাড়া খুবই কম আসে।
ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে আমি রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে উবারে উঠি। রাজ্জাক ভাইকে নামিয়ে দিয়ে আমি বাসায় এসেছিলাম। ভাড়া সাড়ে চারশো টাকা এসেছিলো। প্রথমবার ঢাকাতে উবারে উঠার অভিজ্ঞতা হলো।
তারপর অনেকদিন আর উবারে উঠা হয়নি। একদিন কি মনে করে উবার অ্যাপস ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি। তারপর কিছুদিন চলে যায়। একদিন একটা এসএমএস আসে। ফ্রি রাইড। সেটা মিস হয়ে যায়।
কিছুদিন পর আবার একটা এসএমএস আসে। দুইটা উবার ডিসকাউন্ট রাইড। প্রতি রাইডে দুইশো টাকা করে ছাড় পাওয়া যাবে। একটা প্রোমো কোড আছে। সেটা দেওয়া মাত্রই পেয়ে গেলাম।
একটি কাজে পল্টন গিয়েছি। কাজ শেষ করে বের হতে হতে প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে। বেরিয়ে দেখি বাইরে বেশ রোদ।
সিএনজি করে যেতে ইচ্ছে হলো না। যেহেতু উবারে দুইশো টাকার দুইটা ডিসকাউন্ট রাইড আছে তাই উবারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
উবারে কল দিলাম। দেখালো চার মিনিট দূরে। ভাড়া ৩২৫ টাকা। তাহলে ডিসকাউন্ট দেওয়ার পর আমার খরচ পড়বে ১২৫ টাকা। খুশি মনে কনফার্ম করে দিলাম। সাথে সাথে ড্রাইবার এবং গাড়ির নাম্বার দেখালো।
একটু পরেই উবারের ড্রাইবারের কাছ থেকে ফোন পেলাম। তিনি এখন পুলিশ কনভেনশন সেন্টারের পাশে আছেন। প্রচন্ড জ্যাম। আসতে দেড়ি হবে। তাই তিনি কল ক্যান্সেল করে দিলেন।
আবার কল দিলাম। যথারীতি রিসিভ হলো। এবার ভাগ্য ভালো কাছেই ছিলো। পাচ মিনিট দেখালেও বার মিনিটের মধ্যে উবার চলে আসলো। ভাড়া ৩২৫ টাকাই।
জ্যাম মোটামোটি ছিলো। গুলশান এসে ১২৫ তাকা ভাড়া দিয়ে নেমে গেলাম।
উবারে চড়ে কেমন লেগেছে তার উপর ভিত্তি করে ড্রাইবারকে রেটিং করা যায়। ফাইভ স্টার এর মধ্যে এক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাচ পর্যন্ত রেটিং দেওয়া যায়।
এবং আর কি কি সেবার মান বাড়ানো যায় তা নির্বাচন করে সাবমিট করার অপশনও রয়েছে।
আরেকদিন বাংলা মোটর থেকে গুলশান যাবো।
উবারে কল দিলাম। ড্রাইবার ফোন দিয়ে জানালেন তিনি এখন তেজগাও আছেন। আসতে দেড়ি হবে।
আমাকে অনুরোধ করলেন, কেটে দেওয়ার জন্য। তিনি নতুন। কিভাবে কাটতে হয় জানেন না। আমি কেটে দিয়ে আর উবারে যাওয়ার রিস্ক নিলাম না। সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম।
আবার একদিন গুলশান থেকে কারওয়ান বাজার যাবো। যেহেতু উবার আসতে দেড়ি হয় তাই অফিস থেকে বের হওয়ার আগেই কল দিয়েছি।
উবার ড্রাইবার কল দিয়ে বললেন, সে এখন কুড়িল আছে। আসতে দেড়ি হবে।
অথচ আমার উবার স্ক্রীনে দেখাচ্ছে পনের মিনিট লাগবে।
যেহেতু দেড়ি হবে তাই কল কাটতে গিয়ে দেখি আমাকে কিছু চার্জ দিতে হবে। তাই আর না কেটে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
সেই উবার আসলো তেতাল্লিশ মিনিট পর। মহা বিরক্ত হয়ে গাড়িতে উঠলাম।
এই হলো মোটামোটি কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা।
আমার সাথে আরো অনেকেই মনে করেন উবারের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ঢাকার প্রচন্ড জ্যাম। জ্যামের কারনে যেমন গাড়ি আসতে দেড়ি হয় তেমনি খরচ অনেক বেড়ে যায়।
যেমন আমি সকাল নয়টায় যখন বাংলা মোটর থেকে গুলশান দুই যেতে চাই তাখন আড়াইশো থেকে তিনশো টাকার মতো ভাড়া দেখায়। কিন্তু রাত নয়টার সময় দেখায় একশোত ত্রিশ থেকে একশোত সত্তর টাকার মতো।
যেহেতু বাংলাদেশে উবার নতুন শুরু হয়েছে তাই আমি উবারে উঠলে ড্রাইবারদের সাথে হালকা কথা বলার চেষ্টা করি।
তাদের সাথে কথা বলে যা জানা গেলো তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হলো তারা উবার অ্যাপস কিভাবে চালাতে হয় তা ভালো ভাবে জানেন না।
উবার কল দেওয়ার সময় দেখা যায় কয়েক মিনিট দূরেই উবার আছে। কিন্তু কনফার্ম করার পর দেখা যায় বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট লাগবে উবার আসতে।
তখন উবারের জন্য অপেক্ষা না করে গরমের মধ্যে সিএনজি নিয়ে যেতে হয়। আর মনে হয়, উবার কেন যে এতো দূরে থাকে!
No Comments