মন ভালো থাকলে আমরা লা লা লা সুর করে গান গাইতে থাকি। আবার আনমনেও লা লা লা সুর করে গুণগুণ করে থাকি।
এবার অস্কারে লা লা ল্যান্ড মুভির সাথে যারা জড়িত তারাও অস্কার নমিনেশন ঘোষণার পর হয়তো শব্দ করে বা গুণগুণ করে লা লা লা সুর করছেন।
শুধু তাই না যারা ইতোমধ্যে এই মুভিটা দেখেছেন এবং ভালো লেগেছে তারাও হয়তো ঠিক একই কাজ করছেন।
আর করবেনই না কেন কারন লা লা ল্যান্ড যে অস্কারে মোট ১৪টি নমিনেশন পেয়ে রেকর্ড করেছে। যেই রেকর্ড এর পূর্বে মাত্র দুইটি মুভির ভাগ্যে ঝুটেছিলো।
শুধু তাইনা পুরু মুভিটিতেই আপনাকে সুর করে গানে গানে ভালোবাসার কথা শুনিয়ে যাবে, এক সাথে নেচে গেয়ে মুভিটি এক অন্য আমেজ তৈরি করবে। কারন মুভিটি যে মিউজিক্যাল রোমান্টিক কমেডি ড্রামা নির্ভর।
আমাদের উপমহাদেশে সাধারণত মিউজিক্যাল ডায়ালগ নির্ভর মুভি হয়না। কতো অসাধারণ যে হতে পারে মিউজিক্যাল মুভি তা কল্পনাই করা যায় না।
১৯৫১ সালে অল অ্যাবাউট ইভ এবং ১৯৯৮ সালে টাইটানিক মুভিই কেবল এই রেকর্ড অর্জন করেছিলো।
প্রায় বিশ বছর পর আবার সেই রেকর্ড। আর একটু হলেই আগের সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস গড়ে ফেলতো।
যেই নমিনেশনগুলো পেয়েছে তার সবই টপ লেবেল ক্যাটেগরিতে। বেস্ট মুভি, বেস্ট ডিরেক্টর, বেস্ট অ্যাক্টর, বেস্ট অ্যাক্ট্রেস, বেস্ট স্ক্রীনপ্লেসহ মোট ১৪টি ক্যাটেগরিতে নমিনেশন।
সাদা ছাড়া কালোরা গত দুই বছর ধরে অস্কার নমিনেশন পাননি। তাই বর্ণবাদী অভিযোগ শুনতে হয়েছে আস্কারের সাথে জড়িতদেরকে। কিন্তু এবার অস্কার সেই সমালোচনা হতে রক্ষা পেয়েছে।
এবার অস্কারে কালোরা মোট নয়টি নমিনেশন পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন ডেনজেল ওয়াশিংটন, স্লামডগ মিলিয়নিয়ার খ্যাত দেব প্যাটেল লায়ন মুভিতে সাপর্টিং অ্যাক্টর এর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য, ভায়োলা ড্যাভিস প্রমুখ।
তবে অস্কার এবার বর্ণবাদী বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা পেলেও ট্রাম্প নিজেকে রক্ষা করতে পারেন নি। কারন তিনি কয়েকদিন হলো প্রেসিডেন্ট হয়েই কয়েকটি মুসলিম দেশে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
এবার অস্কারে ফরেইন ক্যাটেগরিতে যে মুভিগুলো নমিনেশন পেয়েছে তার মধ্যে ইরানের মুভি দি স্যালসম্যান বেস্ট ফরেইন মুভি লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে।
এই মুভিরই অভিনেত্রী তারানাহ আলীদস্তি ইতোমধ্যে এক টুইট বার্তায় বলে দিয়েছেন, তিনি ২৬ ফেব্রুয়ারী লস এঞ্জেলেস-এ অস্কার এর যে আসর বসতে যাচ্ছে তাতে তিনি যোগ দিবেন না। তিনি লিখেন, ইরানীয়ানদের আমেরিকাতে ভিসা বন্ধ ট্রাম্পের একটা বর্ণবাদী কাজ।
তবে এই প্রতিবাদের ফলে ট্রাম্প যে তার অবস্থান থেকে সরে আসবেন না এটা আপাতত তার কাজে বুঝা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, দি স্যালসম্যান মুভির ডিরেক্টর আসগর ফরহাদী। নিশ্চয় তার কথা মনে পড়ছে।
তিনি ২০১১ সালে অ্যা সেপারেশন মুভির জন্য ফরেইন ক্যাটেগরিতে বেস্ট মুভির খেতাব জিতে নেন।
এবারও যদি তার মুভি বেস্ট ফরেইন মুভি হয় তাহলে নিশ্চয় ইরানিয়ানরা অনেক খুশি হবেন। এবং মুভির ডিরেক্টর ট্রাম্প-কে জবাব দিতে পারবেন।
তবে বাংলাদেশের মুভি প্রেমীরা আশাহত হতে পারেন এই কারনে যে, এবারও বাংলাদেশ থেকে কোন মুভি অস্কার নমিনেশনে যেতে পারে নি। আয়নাবাজি বাংলাদেশের হলে দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে সেরা মুভির প্রাইজ দেয়া হয়। যেই মুভিগুলো এই প্রাইজ পায় সেই মুভিগুলোর নাম অনেকেই জানেন না।
অনেক মুভি হলে সেই মুভিগুলো দেখাতে হল কর্তৃপক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করেন না। এটা হতে পারে দর্শকদের অনাগ্রহের কারনে। তাই হয়তো হল মালিকেরা লোকশান দিতে চান না। পুরস্কারপ্রাপ্ত অনেক মুভিই তাই লোকশান দেয়।
কিন্তু এই চিত্র অস্কারের ক্ষেত্রে পুরু উল্টা।
সেখানে যেই মুভিগুলো নমিনেশন পায় সেই মুভিগুলো নিয়ে অস্কার ঘোষণা হওয়া পর্যন্ত মাসব্যাপি আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। সেই মুভিগুলো পৃথিবীব্যাপি মুভি দর্শকরা দেখতে থাকেন। আর তাই এই মুভিগুলো হয় ব্যবসায়িকভাবে সফল।
যাই হোক, মেরিল স্ট্রিপকে সবাই চিনেন অস্কার নমিনেশন গার্ল হিসেবে।
এই বার তিনি নমিনেশন পেয়েছেন ফ্লোরেন্স ফস্টার জেনকিনস মুভিতে অভিনয়ের জন্য। এই নিয়ে তিনি ২০ বার অস্কারে নমিনেশন পেলেন। এবং তিনবার তিনি অস্কারে বেস্ট অ্যাক্ট্রেস প্রাইজ পেয়েছেন।
প্রথম পেয়েছেন ১৯৮০ সালে ক্রেমার ভার্সেস ক্রেমার মুভির জন্য, পরে আবার ১৯৮৩ সালে সফি’স চয়েস মুভির জন্য এবং শেষবার ২০১২ সালে দি আয়রন লেডি মুভিতে অভিনয়ের জন্য। দেখা যাক এবার তিনি কি করেন।
আরেক অস্কার উইনার অভিনেতা মেল গিবসন এবার বেস্ট ডিরেক্টর ক্যাটেগরিতে নমিনেশন পেয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর মুভি হকসো রিজ পরিচালনা করে। শুভ কামনা রইলো মেল গিবসনের মুভির জন্য।
লা লা ল্যান্ড কিছুদিন আগেই গোল্ডেন গ্লোব-এ সাতটি ক্যাটেগরিতে নমিনেশন পেয়ে সব কয়টিতেই জয়ী হয়ে সেখানেও রেকর্ড গড়ে তুলে।
তবে আগে অনেক মুভিই গোল্ডেন গ্লোবে ভালো করলেও অস্কারে এসে হতাশ হওয়ার নজিরও রয়েছে।
এর আগে অস্কারে বেন-হার, টাইটানিক এবং লর্ড অফ দা রিংস মুভি সিরিজের তৃতীয় মুভিটি মোট এগারটি করে অস্কার প্রাইজ জিতে নেয়।
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারী সব অপেক্ষার পালা শেষ হবে।
সেদিনই দেখা যাবে শেষ পর্যন্ত লা লা ল্যান্ড সুরে সুরে কয়টি অস্কার প্রাইজ তার নিজের ঝুলিতে তুলতে পারে।
No Comments