বিংশ শতাব্দী পেরিয়ে এখন আমরা একুশ শতকে। এখনো আমাদের পছন্দের তালিকায় প্রফেশন হিসেবে প্রথম দিকের কয়েকটি হলো ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার।
প্রতিনিয়তই উন্নত বিশ্বে প্রফেশনের চেঞ্জ হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই প্রফেশনগুলোতেই পড়ে আছি।
লগান, রং দে বাসন্তী, তারে জমিন পার মুভির পর থ্রি ইডিয়টস।
প্রত্যেকটি মুভিই ব্যতিক্রম।
আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আমির খান এসব মুভিতে অভিনয় করেছেন এবং প্রতিটি মুভিই আলাদা।
সর্বশেষ থ্রি ইডিয়টস মুভিটি ইনডিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এটি ইনডিয়ার অন্যতম ব্যবসা সফল মুভি। এর সুবাদে আমির খান ফিলম ফেয়ারে সবার ওপর মানে এক নাম্বার পজিশনে অবস্থান করেছেন।
যারা মুভিটি দেখেছেন তারা জানেন, মুভিটির মধ্যে সাবজেক্ট চয়েস হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার প্রফেশনটির কথা বারবার এসেছে।
আমাদের মতো অনুন্নত দেশে ভালোভাবে পড়ালেখা শেষ করে একটি চাকরি জোগাড় করাই অভিভাবকদের লক্ষ্য। তারা চান তাদের সন্তানরা সফল হয়ে সমাজে তাদের মুখ উজ্জ্বল করবে।
অজান্তেই তাদের আশাগুলো চাপিয়ে দিচ্ছেন সন্তানদের ওপর। একবারও বোঝার চেষ্টা করছেন না তাদের সন্তানদের সে বিষয়টি পড়তে ইচ্ছা আছে কিনা।
সবচেয়ে করুণ কাহিনী হলো, কিছু কিছু পরিবারে ট্র্যাডিশন হয়ে গেছে যে, ছেলে হলে হতে হবে ইঞ্জিনিয়ার আর মেয়ে হলে হতে হবে ডাক্তার। এই সিদ্ধান্তটি পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার পূর্বেই ঠিক হয়ে থাকে।
ফলে অনেক সময় পরিবারের আশা সন্তানদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
এর কারণ হতে পারে সন্তান হয়তো একটি বিষয়ে ভালো করছে বা তার একটি বিষয় ভালো লাগে। যেমন, হতে পারে ফটোগ্রাফি বা মিউজিক।
কিন্তু তাকে যদি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার হতে বলে সে হয়তো পুরোপুরি মনযোগ দিতে পারবে না। ফলে রেজাল্ট হতে পারে উল্টো।
এর ফলে অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে। এই বিষয়টিই থ্রি ইডিয়টস মুভিটিতে দেখানো হয়েছে।
থ্রি ইডিয়টস-এর তিনজনের চরিত্রেই রয়েছে ভিন্নতা।
তবে র্যাঞ্ছোর কাহিনী প্রথমে রহস্যময় থাকলেও পরে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে সকল কাহিনী। এরপর দর্শকদের তার প্রতি সহানুভূতির পাল্লা বাড়বে।
সে যখন তার বন্ধু অর্থাৎ অন্য দুই ইডিয়টস রাজু এবং ফারহানের সাহায্যে এগিয়ে আসে তখন রাজু এবং ফারহানের অভিব্যক্তি শুধু র্যাঞ্ছোকেই অশ্রুসিক্ত করবে না সকল দর্শককেই অশ্রুসিক্ত করবে।
অন্যদিকে রাজু যে ফ্যামিলি থেকে এসেছে তেমন ফ্যামিলি থেকে আমাদের দেশের অনেক ছেলে-মেয়ে আছে যাদের একটাই আশা, পড়ালেখা শেষ করে একটি চাকরি। তাদের ফ্যামিলির যে অবস্থা থাকে আসলে এর বাইরে তাদের আর কিছু ভাবারও থাকে না।
ঘরে বাবা অসুস্থ এবং বোন অবিবাহিত থাকলে রাজুদের মতো ছেলেদের সারাক্ষণ ওই চিন্তা করতেই সময় চলে যায়।
মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিরও একই অবস্থা।
তারাও চান ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করে ভালো একটি চাকরি করুক, বাড়ি-গাড়ি করুক।
কিন্তু তারা যে অন্য প্রফেশনেও ভালো করতে পারে তা বাবা-মা কখনোই চিন্তা করেন না। একই ধ্যান-ধারণার মধ্যে মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির অভিভাবকরা ঘুরপাক খাচ্ছেন।
আর এটা ফারহানের চরিত্র দেখলেই বোঝা যায়।
মুভিটির অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো পিয়া।
তার বিয়ে হওয়ার কথা যে ছেলেটির সাথে সে অনেক বিত্তবান। সে টাকাকেই জীবনের সবকিছু মনে করে।
র্যাঞ্ছোর পিয়াকে বারবার প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যে, আসলে যারা শুধু পড়ালেখা করে অনেক টাকা-পয়সার মালিক হয়েছেন তারা টাকা-পয়সা ছাড়া আর কিছু বোঝেন না।
এটা চতুরকে দেখলেও বোঝা যায়।
আমাদের অভিভাবকরাও বুঝতে চান না যে, এখন অনেক প্রফেশন এসেছে। ভালোভাবে যে কোনো কাজ করলেই জীবনে সফল হওয়া যায়।
অনেক ছেলে-মেয়েই শুধু চাকরির জন্য পড়ালেখা করেন।
পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করে হলে যান এবং পরীক্ষার খাতায় লিখে দেন। পাস করে যান। কিন্তু নিজের মধ্যে কোনো ক্রিয়েটিভিটি থাকে না।
তাই যখন র্যাঞ্ছো বোর্ডে দুটি শব্দ লিখেন তখন স্টুডেন্টস এবং শিক্ষক কেউই ধরতে পারেননি। বরং তারা উদ্ভ্রান্তের মতো বই খুজতে থাকেন কোথায় শব্দটি আছে।
তারা শব্দটি বের করতে পারেননি। না পারার কারণ হলো, প্রকৃত পক্ষে শব্দ দুটি ছিল তারই বন্ধু রাজু এবং অন্যটি আরেক বন্ধু ফারহানের নাম।
মুভিটির প্রথমেই লেখা ওঠে সকল চরিত্রই কাল্পনিক।
আসলে কাল্পনিক লেখা থাকলেও প্রতিটি চরিত্রই যে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি তা মুভিটি দেখলে বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে মুভিটিতে র্যাঞ্ছোকে যেভাবে সফল দেখানো হয়েছে তা অনেকেরই বিস্ময়কর মনে হতে পারে। তবে তার সফলতাকেও স্বপ্নের মতো করে তুলে ধরা হয়নি।
চেষ্টা এবং উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে যে কোনো সমস্যাই যে সমাধান করা যায় তা র্যাঞ্ছোর চরিত্র থেকে বোঝা যায়।
মুভিটিতে আমাদের অনেক বিষয়ই তুলো ধরা হয়েছে।
মুভিটি প্রথমে দেখতে বসলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠতে ইচ্ছা করবে না।
কমেডি ধাচের একটি মুভি এবং প্রতি মুহূর্তে আমাদের ধ্যান-ধারণাকে কমেডির মাধ্যমে নাড়া দেবে।
আর শেষ মুহূর্ত না দেখা পর্যন্ত মুভির কাহিনী বোঝা যাবে না।
মুভিটি ক্যারিয়ার গাইডলাইন হিসেবে কাজে দেবে।
No Comments