Movie Review

মুক্তিযুদ্ধের উপর মুভি দি উইন্ড দেট শ্যাকস দা বার্লি

December 16, 2016
দি উইন্ড দেট শ্যাকস দা বার্লি

দীর্ঘ নয় মাস শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।

এই নয় মাসে মা হারিয়েছেন তার প্রিয় সন্তানকে, স্ত্রী হারিয়েছেন তার স্বামীকে, বোন হারিয়েছেন তার ভাইকে। লাখ লাখ ভাই-বোনের জীবনের বিনিময়ে আমাদের প্রিয় দেশ স্বাধীন হয়েছে।

আমাদের দেশ স্বাধীন করতে যে সব বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন তারা এখনও স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা মনে করে কেউ আনন্দ পান আবার কেউ স্বজন হারানোর বেদনায় চোখ ভেজান।

অনেকের মনেই ক্ষত আছে। এই ক্ষত নিয়েই তারা বেচে আছেন।

আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গর্ব বোধ করি।

কিন্তু যারা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেও স্বপ্নের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেন না তাদের কষ্ট খুবই করুণ।

এমনকি অবমাননাকরও।

অনেক ক্ষয়-ক্ষতি মেনে নিয়েও পরাধীনভাবে বেচে থাকা সত্যিই খুব কষ্টকর।

যেমন আয়ারল্যান্ড।

আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিছু মুভি তৈরি হয়েছে।

গেরিলাদের কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের আগুনের পরশমণি।

নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত মুভি গেরিলা।

দুটি মুভিই দর্শকমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

তেমনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর ভালো ভালো মুভি তৈরি হয়েছে।

আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘দি উইন্ড দ্যাট শেকস দি বার্লি’ মুভিটি। আয়ারল্যান্ড পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পায়নি। পেয়েছে স্বায়ত্তশাসন।

এই মুভিটির নাম নেয়া হয়েছে একই নামের টাইটেল সং দি উইন্ড দ্যাট শেকস দি বার্লি থেকে।

মুভিটি রিলিজ পাওয়ার পর বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় এটি প্রশংসিত হয়। ক্রিটিকরা এর পক্ষে পজিটিভ রিভিউ লিখেন। একটি পত্রিকা লেখে, এটা একটা ব্রেভ, গ্রিপিং ড্রামা।

মুভির পটভূমি ১৯২০ সাল।

বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য কিছু মানুষ গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। এ গেরিলা বাহিনীতে বিভিন্ন পেশাজীবী রয়েছেন। যেমন আছেন ক্ষেতমজুর ঠিক তেমনি আছেন ডাক্তারও।

এই দলে আছেন দুই ভাই টেড যিনি বড় এবং ড্যামিয়েন যিনি ছোট পেশায় ডাক্তার।

তারা একত্রে গেরিলা হামলা করে একের পর এক বৃটিশদের নাজেহাল করছেন। কিন্তু তাদেরই দলের সদস্য বেইমানি করে বৃটিশদের কাছে সব তথ্য পাচার করে দেয়। তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয় কোথায় অস্ত্র আছে তার খবর দেয়ার জন্য।

তাদেরকে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তা সত্ত্বেও টেড কোনো তথ্য দেন না। পরে তারা একজনের সহায়তায় জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।

যখন তারা বেরিয়ে আসেন জেলখানা থেকে তখন তারা জানতে পারেন কে এ কাজ করেছে। এবং তাদের সবাইকে শাস্তিস্বরূপ গুলি করে হত্যা করা হয়।

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এর লেখা একাত্তরের ডায়েরী-তে বর্ণনা রয়েছে পাক হানাদার বাহিনীদের বর্বর অত্যাচারের কথা।

তার ছেলে রুমিকে ধরে নিয়ে যায়। সাথে তার স্বামীকেও।

সেখানে তাদের উপর বর্বর অত্যাচার করা হয়।

শেষ পর্যন্ত রুমি তাদের হাতেই শহীদ হন।

সুলতান সালাহউদ্দীন আহমেদ নিজেই গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবং পাক সেনাদের হাতে ধরা পড়েছিলেন।

তিনি সেখানে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেছেন। সৌভাগ্যক্রমে তিনি  বেচে যান।

পরে তিনি সেই সময়ের উপর সুতোর টানে নামে একটি বই লিখেন।

তার সেই বই পড়লে চোখে পানি চলে আসে। দেশের জন্য কতো নির্যাতন সহ্য করেছেন!

বাংলাদেশের মুভি ডিরেক্টররা এইসব বইয়ের উপর মুভি নির্মান করার বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।

যাই হোক, যখন তাদের এই ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছিল তখন তাদের দলের অনেক সদস্যই চলে যাচ্ছিল। কিন্তু তখন তারা হতাশ হলেও থেমে থাকেননি। তারা আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করেন।

এক পর্যায়ে বৃটিশরা সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়।

বৃটিশরা এই হানাহানি বন্ধের জন্য আয়ারল্যান্ডকে স্বাধীনতার নামে দেয় স্বায়ত্তশাসন।

বৃটিশ সব সৈন্য চলে যাবে। আয়ারল্যান্ডের জনগণই দেশ চালাবে। কিন্তু আইন-কানুন, সিদ্ধান্ত সব আসবে বৃটিশদের কাছ থেকে।

বড় ভাই টেড এটা মেনে নেন।

ছোট ভাই ড্যামিয়েন এ ধরনের পোশাকি স্বাধীনতা চান না। তিনি অটল থাকেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার।

ভাগ হয়ে যায় দলের সদস্যরা।

বড় ভাই চলে যান দেশ পরিচালনায়।

আর এদিকে ছোট ভাই গেরিলা বাহিনীতে।

এবার শুরু হয় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ। ছোট ভাইকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে বৃটিশরা তাদের গ্রেফতার করে যে সেল-এ রেখেছিলো এখন সেই সেলেই ছোট ভাইকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। শুধু পার্থক্য হলো তখন তারা বন্দী হয়েছিলেন ভিনদেশিদের হাতে, এবার বন্দী হলেন নিজের দেশের মানুষ। আপন ভাইয়ের নির্দেশে।

ছোট ভাইকে একসঙ্গে দেশের জন্য কাজ করতে বলেন বড় ভাই। কিন্তু ছোট ভাই বলেন, আমরা তো এখনও আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা পাইনি। তাই যুদ্ধ থামানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।

যখন ছোট ভাইকে বুঝিয়ে কোনো লাভ হলো না তখন তাকে নিয়ম অনুযায়ী ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে হত্যার হুকুম দেয়া হলো।

ছোট ভাইকে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে বড় ভাইও আছেন।

বড় ভাইয়ের মানসিক অবস্থা দেখে এক অফিসার বললো, স্যার আপনি কমান্ড দিতে না পারলে আমি দিই।

তখন বড় ভাই বললেন, না আমিই কমান্ড দিতে পারবো!

বড় ভাইয়ের কমান্ডে ফায়ার করা হলো ছোট ভাইকে!

মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ছোট ভাই ড্যামিয়েন। আর সাথে সাথে কান্নায় ভেঙে পড়েন বড় ভাই।

মুভিটির সবচেয়ে করুণ, শক্তিশালী, সবসময় মনে রাখার মতো দৃশ্য হলো এটি।

অনেক মানুষই মুভি দেখে বা বই পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না। মিশে যান মুভির বা বইয়ের কাহিনীর সঙ্গে। আর সেটা যদি হয় নিজের দেশ সম্পর্কে তা হলে তো আর কথাই নেই। সেখানে যোগ হয় প্রচন্ড আবেগ। এই দৃশ্যটি দেখার পরও অনেকেই হয়তো চোখের পানি ধরে রাখতে পারবেন না।

মুভিটি দেখলে বোঝা যাবে আসলে স্বাধীনতা কাকে বলে।

কতো কঠিন পথ পেরিয়ে স্বাধীনতা নামক স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিতে পারে।

অবশ্যই এই মুভি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান বহু গুণে বাড়িয়ে দেবে।

যেমন যারা যুদ্ধে অংশ নেন তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি নেমে আসতে পারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। মারা যেতে পারেন নিকট আত্মীয়। বাড়ি-ঘর আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হতে পারে।

এমনকি যিনি যুদ্ধ করছেন তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি জানেন যেকোনো সময় তিনি দেশের জন্য মারা যেতে পারেন। এটা জেনেও তিনি যুদ্ধে যান একটি স্বাধীন দেশের জন্য।

একটি পতাকার জন্য।

মুভিটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পের ধারাবাহিকতা আছে। তাই মুভি দেখতে গিয়ে দর্শক কখনও হোচট খাবেন না।

সবচেয়ে বড় কথা হলো মুভিটি মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক।

তাই স্বাভাবিকভাবেই মুভিটির প্রতি সবার আগ্রহ জন্মাবে।

কারণ, আমাদের প্রিয় দেশও অনেক ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাই মুভিটি অনেককেই হয়তো অতীত স্মৃতিতে নিয়ে যাবে।

চমৎকার মুভিটির ডিরেক্টর কেন লোয়াচ।

একই সঙ্গে ওয়ার, হিস্ট্রি এবং ড্রামা নির্ভর মুভিটি পাচটি পুরস্কার এবং ১৯টি নমিনেশন পায়।

মুভিটি ২০০৬ সালের ২৩ জুন আয়ারল্যান্ডে রিলিজ পায়। মুভিটিতে অভিনয় করেন সিলিয়ান মার্ফি, প্যাড্রায়াক ডিলানি এবং অরলা ফিৎগেরাল প্রমুখ।

You Might Also Like

No Comments

Leave a Reply

error: Content is protected !!