মন বোঝা কঠিন।
মানুষের মনের মধ্যে কখন যে কি হয় আর কেনো এমন হয় তা না বললে কারো পক্ষে বুঝা সম্ভব হয়ে উঠে না।
অনেকে যদি বলেও ফেলেন তাহলেও বুঝা সম্ভব হয়না। কারন নিজের ভেতরের ভাব প্রকাশ করার মতো উপযুক্ত কথা সবাই বলতে পারেনা। কিছু সীমাবদ্ধতার কারনেও এটা হতে পারে।
ঠিক এমনি জটিল মনের গল্প নিয়ে অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল মুভি তৈরি করেছেন ডিরেক্টর করণ জোহর।
এই বার নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো এক সাথে কাজ করেছেন রনবির কাপুর (আয়ান) এবং আনুশকা শর্মা (আলিযেহ)।
আয়ান, আলিযেহ-কে অনেক ভালোবাসে। সমস্যাটা হলো আলিযেহ আয়ানকে বন্ধু মনে করে। তাই দুইজনের চাওয়া-পাওয়া বিপরীত মুখী।
কথায় কথায় একদিন আলিযেহ আয়ানকে বলে, বয়ফ্রেন্ড চলে যেতে পারে। এমনকি হাসব্যান্ডও চলে যেতে পারে কিন্তু বন্ধুত্ব সব সময় টিকে থাকে।
আলিযেহ-র এই কথার সাথে আয়ানের সাথে যেদিন ডিস্কোতে দেখা হয়েছিলো তার সাথে মিল পাওয়া যায়না।
দুইজনই একে অপরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। পাশের রুমে গিয়ে তারা একে অপরকে ক্রমাগত কিস করতে থাকে।
এখানে প্রশ্ন হলো আলিযেহ যদি আয়ানকে বন্ধু ভেবে থাকে তাহলে কেন প্রথম দিন কিস করেছিলো? বন্ধুকে কি কিস করা যায়?
যদি আলিযেহ-র কাছে কিস করা স্বভাবিক হয়েই থাকে তাহলে একদম শেষ দিকে আয়ান যখন কিস করতে যায় তখন আলিযেহ কেন বাধা দিয়েছে?
এখন একটা প্রশ্ন উঠতে পারে, আলিযেহ কবে থেকে আসলে আয়ানকে বন্ধু হিসেবে ভেবেছে?
এটা হতে পারে যেদিন ডিজে-তে আলিযেহ এবং তার পুরানো বয়ফ্রেন্ড ডিজে আলির সাথে দেখা হয় সেদিন থেকে।
তাদের দুইজনের মধ্যে কিছু ভুল বুঝাবুঝি ছিলো। এখন ডিজে আলি তার সেই অতীত ভুলের জন্য দুঃখিত। আলিযেহ মেনে নেয়।
আর এদিকে আলিযেহ আয়ান কে চলে যেতে বলে।
এখানে ডিজে আলি-র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান।
জম্মু এবং কাশ্মীরে সন্ত্রাসি হামলার পর মুভির রিলিজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান-কে নিয়ে এই মুভি করাতেই মুভির রিলিজ উগ্রবাদী হিন্দু গোস্টির হুমকির মুখে পড়ে।
শেষ পর্যন্ত ডিরেক্টর করণ জোহর কথা দেন তিনি আর ভবিষৎ-এ কখনো পাকিস্তানীদের নিয়ে কোন মুভি বানাবেন না। কেবল তারপরই তার এই মুভিটি আলোর মুখ দেখে।
বাধা পেলেও মুভিটি রিলিজের পর ভালো ব্যবসা করে।
মুভিটির মার্কেটিং এবং ডিস্ট্রিবিউশন খরচসহ বানানোর মোট বাজেট ছিলো ১০০ কোটি রুপি।
কিন্তু রিলিজের পূর্বেই মুভির মিউজিক, স্যাটেলাইট এবং ডিজিটাল স্বত্ত বিক্রি করে ৭৫ কোটি রুপি তুলে নেয়। আর মুভিটি রিলিজ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ১০০কোটি রুপির ঘরে পৌছে যায়।
এর মাধ্যমে ডিরেক্টর হিসেবে করণ জোহর প্রথম বারের মতো এই ক্লাবের সদস্য হলেন।
যাই হোক, ফিরে আসে আয়ান।
তবে আলিযেহ-র আচরণ সন্দেহের সৃষ্টি করে। কারন, কয়েক মাস পর আয়ান যখন তার নতুন গার্লফ্রেন্ড সাবা যিনি কবিতা লিখেন তাকে খুজে পায় তখন আয়ান বিষয়টা আলিযেহ-কে জানায়।
সাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঐশ্বরিয়া রায়। এই মুভির মাধ্যমে প্রথম বারের মতো রনবির কাপুর এবং করণ জোহরের সাথে কাজ করলেন ঐশ্বরিয়া রায়।
সাবার ছবি পাঠায় আলিযেহ-কে। আয়ান তার নতুন গার্লফ্রেন্ড পেয়ে খুশি এটা জানতে পেরে আলিযেহও খুশি হয়।
একদিন আলিযেহ ভিয়েনা-তে চলে আসে আয়ানের সাথে দেখা করার জন্য এবং তার গার্লফ্রেন্ডকে দেখার জন্য।
ডিনারের সময় যখন আয়ান তার গার্লফ্রেন্ডকে কিস করে তখন আলিযেহর মুখের অভিব্যাক্তিতে মন খারাপ ভাব প্রকাশ পায়। আর এদিকে আয়ানেরও মন খারাপ দেখা যায়।
বিষয়টা সাবা খেয়াল করে। দুইজনকেই দেখে বুঝতে পারে আয়ান এখনও আলিযেহকে ভুলতে পারেনি। আর আলিযেহ মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে।
এটা বুঝতে পেরে আয়ানকে ফিরিয়ে দেয় সাবা।
এখানে আয়ানের গার্লফ্রেন্ড খুবই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। আয়ান ভুলে থাকার জন্য যে অভিনয় করে যাচ্ছে এবং কখনও তাকে ভালোবাসতে পারবেনা সেটা সাবা বুঝতে পারে।
এবং আয়ানের জীবন থেকে সরে পড়ে।
একবার আলিযেহ ফিরিয়ে দিচ্ছে আয়ানকে। আবার সাবা ফিরিয়ে দিচ্ছে।
শুধু তাই না, অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল মুভির পুরা অংশ জুড়েই দেখা গেছে আয়ান আলিযেহ এবং সাবার সাথে যেটাই করতে চাইতো তা ঠিক করে দিচ্ছে তারা দুজনে। সেটা কেমন হবে, কি করে হবে বা আদৌ হবে কিনা তার সবকিছু তাদের দেখানো পথেই করতে হচ্ছে আয়ানকে।
তবে এখানে গল্পটা যেহেতু আয়ানের মুখ থেকে এসেছে তাই নিরপেক্ষভাবে বিষয়টা নাও আসতে পারে। তার ভুলগুলো কম এসেছে। কিন্তু যদি আলিযেহ এবং সাবার কাছ থেকেও শুনা যেতো তাহলে হয়তো দুইদিকের বিষয়টাই জানা যেতো।
এখন প্রশ্ন হলো, আলিযেহ যদি তাকে না ভালোবেসে থাকে তাহলে সে কেন তখন মন খারাপ করেছিলো?
আর আয়ান যে তাকে ভালোবাসে এটা আলিযেহ জানতো। আলিযেহ তার সাথে দেখা করলে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারবে না এটা তার বুঝার দরকার ছিলো।
আলিযেহ বন্ধু হিসেবে এখন যে কাজটি করেছে তাতে আয়ানের কি ভালো হলো?
আলিযেহ যদি না আসতো, যোগাযোগ না করতো তাহলে এক সময় হয়তো আয়ান ভুলে যেতো। নতুন সঙ্গীকে নিয়ে পুরাপুরি সুখি না হলেও একটু ভালোভাবে তার সামনের সময়টা কাটতো।
সাবা ফিরিয়ে দেওয়ার পর নিজের গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আয়ান। একের পর এক তার গান তুমুল জনপ্রিয় হতে থাকে শ্রোতাদের কাছে।
মুভির কয়েকটি গান খুবই জনপ্রিয় হয় যার মধ্যে রয়েছে বুলিয়া, অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল টাইটেল মিউজিক এবং চান্না মেরিয়া।
একদিন গান করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আলিযেহর স্বামী ডিজে আলির সাথে দেখা হয়। আয়ান এড়িয়ে আসতে চাইলেও দেখে ফেলে ডিজে আলি।
পরে আয়ান ডিজে আলির কাছে জানতে পারে তাদের সম্পর্ক বেশিদিন টিকেনি। এবং আলিযেহ ক্যান্সার আক্রান্ত।
অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল মুভিটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু আয়ানকে আরো অনেক মহান করে তুলা হয় মুভিটিতে।
আয়ান ফিরে যায় আলিযেহর কাছে। তার সেবা করে। এবং শেষ পর্যন্ত আলিযেহর পাশে আয়ান বন্ধু হিসেবেই ছিলো।
No Comments