টানা আধা ঘন্টার বেশি হাটতে পারিনা। এর বেশি হাটলেই পা ব্যাথা করে। রাতে আর ঘুমাতে পারিনা পা ব্যাথার কারনে। সেখানে আজকে আমাকে ট্রেকিং করতে হবে ৯.৪ কি.মি।
গাইড আনোয়ারের কাছ থেকে জানতে পারলাম সাড়ে তিন ঘন্টা লাগবে! কিভাবে হাটবো তা নিয়ে মহাচিন্তায় আছি। তাও আবার পাহাড়ি রাস্তায়!
আমরা আজ কেওক্রাডং থেকে বগা লেক পর্যন্ত ট্রেকিং করে যাবো। প্রথমে প্লান ছিলো বগা লেক এসে রাতে থাকবো। পর দিন ভোরে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে ট্রেকিং শুরু হবে। এবং সেদিনই আবার ট্রেকিং করে বগা লেক এ ফিরে আসবো।
আমি যেহেতু হাটতে পারিনা তাই মাথায় বুদ্ধি বের করলাম। তাদেরকে রাতে কেওক্রাডং থাকার অফার দিলাম। বললাম, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্থানে রাত যাপন করা কেমন রোমাঞ্চ হবে ভেবে দেখেন!
তারা এই আইডিয়াটা মেনে নিল। তবে তাদের শর্ত হলো ট্রেকিং তারা করবেই। এবং সেটা হবে ফেরার দিন।
আগে তো যাই তারপরতো ফেরার কথা। যাওয়ার সময় সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম হয়। কারন বগা লেক থেকে পাহাড় বেয়ে শুধু উপরের দিকে উঠতেই হয়। তাই বেশি পরিশ্রম করতে হয়। আসার সময় পাহাড় বেয়ে শুধু নিচের দিকে নামতে হয়। তারা রাজি হওয়াতে একটু নিশ্চিন্ত হলাম।
আসার দিন ড্রাইভার সবুজের ফোন নাম্বার রেখে দিয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম যদি আমরা ফোন দেই তাহলে সে এখান থেকে আমাদের এসে নিয়ে যেতে পারবে কিনা? সে বলেছিলো পারবে।
কিন্তু আমার সঙ্গীরা আজ আর রাজি হলেন না। তারা যাওয়ার সময় চিংড়ি ঝর্ণা দেখে যাবেন। তাই তারা আজ হেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অবশেষে তাদের কথায় রাজি হতে হলো।
কেওক্রাডং থেকে সকাল ৯.০৫ মিনিটে আমরা বগা লেক এর উদ্দেশ্যে ট্রেকিং শুরু করি। লালের কাছ থেকে সবাই একটা করে বাশ নিয়ে শুরু হয় আমাদের ট্রেকিং।
আগে শুনেছি এবং ছবিতেও দেখেছি পাহাড়ে যারা হাটেন তাদের হাতে বাশ নিয়ে হাটতে। তখন বুঝিনি পাহাড়ে হাটতে গেলে বাশ কতটা সহায়ক। আর বাশ সাথে থাকলে মনে অনেক শক্তিও থাকে।
বাশ ফেলে ফেলে হাটতে শুরু করেছি। সবার হাটার গতি আমার থেকে একটু বেশি। আমি সাধারনত ধীরে ধীরে হাটি। ঘামলে শরীর আঠা আঠা হয়ে যায়। তখন খুবই অসস্থি লাগে। তাই আমি সাধারনত আস্তেই হাটি।
আর এখন তারা যেভাবে হাটছে সেভাবে আমি তাদের সাথে কতক্ষণ তাল মেলাতে পারবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি। তার উপর হাতে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছি। এর জন্য আমার আরো বেশি সময় লাগছে।
তবে গাইড আনোয়ার আমার সাথে সাথে হাটছে। সে খুবই দায়িত্বশীল। সবার দিকে তার নজর আছে। সামনে যারা দ্রুত হাটছেন তাদেরকে আস্তে আস্তে হাঠতে বলছেন। সবাইকে একসাথে হাটতে বলছেন।
দেখতে দেখতে আমরা দার্জিলিং পাড়ায় চলে এসেছি। এখানে দশ মিনিটের রেস্ট।
দার্জিলিং পাড়াটা খুবই ভালো লাগলো। গুছানো, পরিষ্কার, নিরব। রাস্তার দুই পাশে একটু দূরে দূরে কয়েকটা বাড়ি।
কেওক্রাডং পাহাড় থেকে উত্তর দিকে তাকালেই পাহাড়ের গায়ে যে ছোট ছোট কয়েকটা বাড়ি দেখা যায় তাই হলো দার্জিলিং পাড়া।
কয়েকটা ছবি তুলে ক্যামেরাটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। কারন এভাবে দৌড়ে ছবি তোলা সম্ভব না। ছবি তোলার পর আমাকে আবার তাদের পেছন পেছন দৌড়াতে হয়।
একটা দোকানে বসে আমরা রেস্ট নিচ্ছি। সেখান থেকে কেউ আখ খেয়ে নিচ্ছেন। আবার পাহাড়ি কলাও খেয়ে নিলেন।
আমি শুধু পাহাড়ি দুইটা কলা খেলাম। ব্যাগে গ্লুকুজ ছিলো। পানির সাথে মিশালাম। চকোলেট খেয়ে গ্লুকুজ মেশানো পানি খেলাম। বাকিটা ব্যাগে রেখে দিলাম। মাঝে মাঝে খাওয়া যাবে। ট্রেকিং এ গ্লুকুজ, চকলেট তাড়াতাড়ি শরীরে এনার্জি দেয়। তাই সাথে করে এগুলো নিয়ে এসেছিলাম।
মনে পড়ছে যেদিন বান্দরবান আসবো সেদিন চকোলেটগুলো গিফট পেয়েছিলাম। তিনি প্রায়ই গিফট দিয়ে থাকেন। চকোলেট এর সাথে একটা পেনড্রাইভও দিয়েছিলেন। পেনড্রাইভ দিয়ে বলেছিলেন, সেখানে গিয়ে ছবি উঠাবেন। পরে সেগুলো ট্রান্সফার করতে তো পেনড্রাইভ লাগবে।
ভাবি আমিও গিফট দিবো কিন্তু কে কি মনে করবে এটা ভেবে আর দেওয়া হয়ে উঠে না। মনে মনে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই করলাম।
দশ মিনিটের যাত্রা বিরতি শেষ করে আবার হাটা শুরু করলাম।
খাড়া খাড়া রাস্তায় পাহাড় বেয়ে নিচের দিকে কেবল নেমেই চলেছি। রাস্তায় বালির স্তর হবে কয়েক ইঞ্চি। এই বালিতে খুব সতর্কভাবে হাটতে হয়। তা নাহলে বালিতে স্লিপ করে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরই মাঝে কয়েকজন পরেও গেছেন।
আরেকটা ভয় ছিলো। রোদ। কিন্তু আজ সকাল থেকেই আকাশে মেঘ থাকায় রোদ কম লাগছে। মেঘ আর সূর্য লোকুচুরি খেলছে। তাই আমাদের পানি পিপাসাও কম লাগছে।
মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ি আসছে। তখন ধুলায় সব অন্ধকার হয়ে যায়। গাড়ি আসলে আমরা ঝোপের আড়ালে গিয়ে চোখ, নাক বন্ধ করে উল্টা দিকে মুখ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। ধুলা একটু কমলে আমাদের হাটা আবার শুরু হয়।
মাঝে মাঝে ঝোপঝাড় এর মধ্যে দিয়ে হাটতে হয়। চিকন রাস্তার দুই পাশে নল খাগড়ার পাতা ঝুলে থাকে। বাতাস এসে সেগুলো শরীরের উপর এসে পরে। তখন শরীর কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সে দিকেও খেয়াল রাখতে হয়।
ক্যামেরা ব্যাগে রেখে হাটছি। তারপরও আমি সবার পেছনে। আমার সঙ্গী আনোয়ার। তার সাথে কথা বলছি।
সে মাঝে মাঝে গান গেয়ে উঠে। এক লাইন। বড় জোড় দুই লাইন তার বেশি না। তারপরই থেমে যায়। কথা বলেনা।
আমার কৌতূহল হলো।
আনোয়ার তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
সে চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। একটু সময় নেয়। আমি কিছু বলি না। তাকে সময় দেই।
আস্তে আস্তে বলে, আমি একজনকে ভালোবাসতাম। সে আমার সাথে বেঈমানী করেছে। আমি তার জন্য সব কিছু করেছি।
আমি যতো ইনকাম করতাম তার বেশির ভাগ টাকাই আমি তাকে দিতাম। সে আমার কাছে টাকা চাইতো। আমি কখনো না করতামনা। আমি তাকে যেহেতু ভালোবাসতাম তাই তাকে দিতাম। তাকে দিলে আমার খুব ভালো লাগতো। আমার মন চাইতো আমি তাকে আমার সব কিছু দিয়ে দেই।
কিছুটা থেমে সে আবার বলা শুরু করে। বিষয়টা আমার বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায়। আমি বাড়িতে টাকা যেহেতু কম দিতাম তাই আমার বাবা-মা সন্দেহ করে। বাড়ি থেকে আমাকে তার সাথে চলতে নিষেধ করে।
কিন্তু তারপরও আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখি। কিন্তু হঠাত একদিন শুনতে পাই তার আরেকজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে। তার সাথে দেখা করি। সে স্বীকার করে। সে আমাকে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয়। বুঝতে পারি সে আমার টাকার জন্য ভালোবেসে ছিলো।
কিছুদিন আমি আমার মাঝে ছিলাম না। মদ খেয়ে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকতাম। তারপরও তাকে আমি ভুলতে পারিনা। পরে বাবা-মা আমাকে জোড় করে বিয়ে করিয়ে দেন।
বিয়ের রাতে কসম কেটেছি সে চলে গেছে চলে যাক। এখন থেকে আমি আর তার কথা মনে করবো না। আমি আর মদ খাবো না। আমি নতুন করে আবার জীবন শুরু করবো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমি আর মদ ধরিনি।
আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, আনোয়ার সত্যিই কি তুমি তাকে ভুলে যেতে পেরেছো? আনোয়ার একথার কোন জবাব দেয়না। চুপ করে থাকে। সে হয়তো মিথ্যা কথা বলতে চাচ্ছে না। সে আবার গান ধরে। এক লাইন গেয়েই আবার থেমে যায়।
আমরা হাটতে হাটতে প্রায় অর্ধেক এসে পরেছি। যেহেতু আমরা পুরুটা সময় ধরেই পাহাড়ের উপর দিয়ে হেটে চলেছি তাই সামনে, ডানে, বামে যে দিকেই তাকাইনা কেন শুধু উচু নিচু পাহাড় দেখতে পাচ্ছি। আর মাঝে মাঝে দূরে পাহাড়ের গায়ে একটা বা দুইটা ঘর দেখা যাচ্ছে।
কুয়াশা এখনো কাটেনি। তাই দূরের পাহাড় ঝাপসা লাগছে।
কিছু পরে পরেই পাহাড়ের গায়ে ছাই দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে আগুন ধরিয়ে এগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
গাইড আনোয়ারের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, প্রতি রাতেই পাহাড়ের গায়ে আগুন জ্বলে। রাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সারা রাত ধরে এই আগুন জ্বলতে থাকে। ছোট ছোট গাছ, লতাপাতা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঝুম চাষ করার জন্য পাহাড়ের গায়ে এই আগুন ধরানো হয়।
আমাদের আবার যাত্রা বিরতি দশ মিনিটের।
একটা যাত্রী ছাওনির নিচে বসলাম। এমন সময় আরেকটি দলকে বিপরীত দিক থেকে এসে আমাদের সাথে বসতে দেখলাম।
দেখি এভারেস্ট জয়ী মি. মুহিত।
তিনি একটি দল নিয়ে কেওক্রাডং এর দিকে যাচ্ছেন। আজ রাতে তিনি তার দল নিয়ে সেখানে থাকবেন।
ব্যাগ থেকে আবার চকোলেট আর গ্লুকোজ মেশানো পানি বের করে খেয়ে নিলাম।
সাথের সঙ্গীরা মি. মুহিতের সাথে কথা বলছে। সবাই খুশি পাহাড়ে এসে তার সাথে দেখা হওয়াতে।
আনোয়ার ডাকছে। আবার ট্রেকিং শুরু করতে ডাকছে। এরই মধ্যে দলের সবাই মি. মুহিতের সাথে ছবি তুলে নিয়েছেন।
আমাদের আবার যাত্রা শুরু হলো।
কিছু কিছু রাস্তা এতোটাই ঢালু যে নামতে খুব বেগ পেতে হয়। আর যেহেতু পাহাড় খুবই খাড়া তাই সবাই খুবই সতর্কভাবে নামছেন। কারন একবার স্লিপ করে নিচে পরে গেলে আর খুজে পাওয়া যাবে না।
একটা জায়গায় গিয়ে দেখি গাছের গুড়ি ফেলে সাকো তৈরি করা হয়েছে। নিচে দিয়ে সম্ভবত ঝর্ণার পানি যায়। সেখানে গিয়ে একটু ভয় ভয় লাগলো। আমরা আস্তে আস্তে সাকোটি পার হলাম।
যেহেতু পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে হয় তাই শরীরের ব্যালেন্স রাখাটা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। কারন শরীরের সমস্ত বাড় নিচের দিকে ঝুকে পড়ে। ঠিকমত বাশ দিয়ে না ধরলে নিচে পড়ে যাওয়ার ঝুকি থাকে। আর যেহেতু রাস্তায় ধূলা জমে পুরু হয়ে আছে তাই একটু অসতর্ক হলেই নিচে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
পায়ে হাটার রাস্তা একটু ভিন্ন। যে রাস্তায় গাড়ি চলে সে রাস্তা থেকে আলাদা। কিছু কিছু রাস্তা খুবই সরু। আবার একদিকে খুবই ঢালু। সেই রাস্তাটা এতোটাই বিপদঝনক যে অনেক সতর্ক না হলে প্রতি মুহূর্তে বিপদ হতে পারে।
মাঝে মাঝে কিছু জায়গা আছে যখন গা শিউড়ে উঠে। এই বিপদঝনক রাস্তা পেরিয়ে একটু পরেই আমরা চিংড়ি ঝর্ণাতে চলে আসলাম।
চিংড়ি ঝর্ণা দেখে সবাই চিৎকার করছেন। ব্যাগ রেখে ঝর্ণার পানিতে হাত-মুখ ধোয়ে নিচ্ছেন। এতোক্ষণ বালির মধ্যে দিয়ে হেটে সবার শরীর সাদা হয়ে গিয়েছিলো। জামা-কাপড়ের রঙ-ও পালটে গেছে। পানি পেয়ে সবাই যেন সস্তি পেলেন।
বড় বড় পাথরের খন্ড পেরিয়ে আমরা ঝর্ণার কাছে গেলাম। পানি খুবই অল্প। শুষ্ক মৌসম থাকার কারনে এখন পানির চাপ কম। বৃষ্টির সময় পানির চাপ বেশি থাকে। আমরা তাই দেখে খুশি। অন্তত একটা খর্ণা তো দেখতে পেলাম।
ঝর্ণা দেখে নিচে নেমে এলাম। পাথরের উপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছি। এখানে একটু বেশি সময় ধরে বিশ্রাম নিবো। কারন আর বেশি পথ নেই বগা লেক যেতে। আর আধা ঘন্টা হাটলেই আমরা বগা লেক চলে যাবো। তাই এখানে কিছুটা বেশি সময় বিশ্রাম নিতে চাইলাম।
ব্যাগ থেকে আবার চকোলেট আর গ্লুকুজ মিশানো পানি বের করে খেয়ে নিলাম।
কেউ কেউ গান ধরেছেন। সবাই একসাথে গলাও মিলাচ্ছেন। ভালো লাগছে।
এমন সময় চোখ পড়ল একটি পাথরের গায়ে। বড় করে মা লেখা। হাতে ক্যামেরা ছিলো। এগিয়ে গিয়ে ছবি তুলছি।
মনে পড়ে গেলো মার কথা। খুব খারাপ লাগছে মার কথা মনে করে। ঢাকা থেকে এসেছি আজ দুইদিন। বান্দরবান নেমে শেষ মার সাথে কথা বলেছিলাম।
বগা লেক এর পর আর নেটওয়ার্ক পাইনি। আমার কাছে গ্রামীণ এবং বাংলালিংক দুইটারই সিম ছিলো। কিন্তু কোনটারই নেটওয়ার্ক সেখানে নেই। রবির নেটওয়ার্ক আছে। আর এদিকে আমার মোবাইলের চার্জও শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
মাকে আসার সময় বলে এসেছিলাম যেখানে যাচ্ছি সব সময় হয়তো নেটওয়ার্ক পাবো না। তাই ফোন দিয়ে আমাকে না পেলে চিন্তা করতে মানা করেছিলাম। আমিই ঠিক সময় ফোন দিবো বলে এসেছিলাম।
পাশেই আরেকটি পাথরে বড় করে লাভ চিহ্ন আকা দেখতে পেলাম। লাভ চিহ্নের মধ্যে মোবাইল নাম্বার দেয়া আছে। নাম লেখা আছে। কিন্তু নামটা বুঝা গেলো না। বুঝা গেলো ভালোবাসা কোথায় চলে এসেছে।
আমরা আবার হাটা শুরু করলাম। দূরে পাহাড়ের নিচে বগা লেক দেখা যাচ্ছে। তার মানে কাছাকাছি চলে এসেছি।
শুরুতে এই দীর্ঘ পাহাড়ি পথ হাটতে পারবো কিনা তা নিয়ে যতটা চিন্তিত ছিলাম তা আর হয়নি। এখন পর্যন্ত পা ঠিকই আছে। ব্যাথা লাগছে না। তবে বুড়ো আঙুলে ব্যাথা লাগছে। এতোটুকো পথ হেটে আসাতে আমার খুব অবাক লাগলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বগা লেক চলে আসলাম। গাইড আনোয়ার আসার সময় ফোন দিয়ে আগেই থাকার জন্য দুইটা রুম বুকড করে রেখেছিলেন।
দোতলায় দুইটা রুম। রুমের তিন পাশ দিয়ে খোলা বারান্দা। কাঠের মেঝ। দেখে খুব ভালো লাগলো।
রুমে ব্যাগ রেখে খোলা বারান্দায় এসে বসলাম। বাতাস লাগছে। শরীরটা আস্তে আস্তে ঠান্ডা লাগছে।
আনোয়ার ডাব নিয়ে এসেছে। সাথে একটা ছেলে দা নিয়ে এসেছে। সে ডাব কেটে দিলো। ডাব খেয়ে ভেতরটাও জুড়িয়ে গেলো।
পা থেকে কেডস খোলে দেখি দুই পায়ের বুড়ো আঙুলেই ফোসকা পরে গেছে।
হাটার সময় কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু জুতা খোলে আর দেখা হয়ে উঠে নি।
তাতে কোন দুঃখ হলো না। কারন শেষ পর্যন্ত কেওক্রাডং থেকে বগা লেক ট্রেকিং করে আসতে পেরেছি।
No Comments