সুলতান এর দিন হাসি আনন্দে কেটে যাচ্ছিলো।
কিন্তু একদিন তার এই হাসি আনন্দ থেমে যায়।
বন্ধুর সাথে বাজি ধরে ঘুড়ির পেছনে দৌড়াতে গিয়ে স্কুটির সামনে পড়ে যায়। স্কুটি চালক মাথা থেকে হেলমেট খুলতেই অবাক হয়ে যায় সুলতান। স্কুটিতে থাকা মেয়েটি রেগে গিয়ে তাকে থাপ্পর মারে।
এতে করে আশেপাশের মানুষ অবাক হয়ে যায়। যেই সুলতান এলাকায় এতো জনপ্রিয় তাকে থাপ্পর!
কিন্তু নির্বিকার সুলতান।
মনে হয় থাপ্পড় একটা না এমন আরো কয়েকটা থাপ্পড় তার গালে পরলেও সে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়েই থাকবে।
প্রথম দেখাতেই সুলতান মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায়।
সে জানতে পারে মেয়েটির নাম আরফা। কুস্তি খেলে স্টেট লেবেল এ। তার বাবা কুস্তির কোচ।
যেহেতু প্রথম দেখাতেই সে তার প্রেমে পড়ে যায় তাই অনেক সাহস নিয়ে আরফাকে তার মনের কথা বলে। কিন্তু আরফা তার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।
ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মানুষ অনেক কিছু করতে পারে। তেমনি সুলতান তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকে।
তার মনে হয় যেহেতু সে কুস্তি খেলে তাই সেখানে গিয়ে কিছু করতে পারলে আরফাকে পাওয়া যাবে।
কিন্তু কুস্তি তো ফান না যদিও তাদের মধ্যে সেদিন ভালো সম্পর্ক হয়েছিলো। দুইজনে একসাথে সময় কাটাতে থাকে, একসাথে স্কুটিতে করে ঘুরতে থাকে। এভাবে তাদের ভালো সময় কেটে যাচ্ছে।
সুলতান একদিন আরফাকে ইনবাইট করে তার বন্ধুদের সাথে একটি রেস্টুরেন্টে।
সেখানে তার বন্ধুরা আরফাকে ভাবী বলে ডাকলে বেধে যায় বিপত্তি। আরফা চলে আসতে চাইলে সুলতান তাকে থামানোর চেষ্টা করে।
একসাথে স্কুটিতে ঘুরে বেরানো, সময় কাটানো, ঘুরে বেড়ানোর সময় তার বন্ধুরা এবং আশেপাশের মানুষের দেখেছে।
এগুলো কি কিছুইনা? মানুষ কি কিছুই মনে করেনি? তারা কি কিছুই বলবে না? এগুলো কি সে বোন হিসেবে করেছে?
যখন সুলতান এই কথাগুলো বলে তখন আরফা তাকে খুব সহজ একটি উত্তর দেয়।
আরফা বলে সুলতানকে সে বন্ধু হিসেবে ভেবেছে। অন্য কিছু না।
উত্তরটা আরফার কাছে যতটা সহজ সুলতানের কাছে ততোটাই কঠিন।
এর পরের কথাগুলো ছিলো খুবই অ্যাটাকিং।
আরফা বলে একবার নিজের দিকে তাকাও। আর একবার আমার দিকে তাকাও। আমি স্টেট লেবেল এ খেলি। আর তুমি কি করো? আমি যাকে বিয়ে করবো সেও হবে আমার মত প্লেয়ার।
একথা বলে আরফা চলে যায়। কিন্তু আরফা জানে না তার এই কথার কি প্রভাব হবে। এই কথাই যে সুলতানের জীবন ঘুরিয়ে দিবে তা আরফা বুঝেনি।
সুলতান ভেঙে পড়ে। আগের মত আর হাসে না, আনন্দ করে না। সুলতান মনে মনে যা ভেবেছিলো তা যে আরফা ভাবেনি সেটা সুলতান বুঝতে পারে।
আসলে কার মনে কি হয় এটা যদি বুঝা যেতো তাহলে হয়তো মানুষ ভুল বুঝতো না আর কষ্টও পেত না।
যেহেতু আরফা জানে সুলতান তাকে ভালোবাসে এবং সেটা যেনেই এখন যদি সে সুলতানের সাথে মিশে তাহলে সুলতান কি বুঝবে? এটা নিয়ে যে প্রবলেম হবে এটা আরফার বুঝা উচিত ছিলো।
সুলতান বাবার সাথে কাজে হাত দেয়। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর সে সিদ্ধান্ত নেয় নিজেকে নিয়ে লড়াই করার। শুরু হয় তার কঠোর পরিশ্রমের।
কিছুদিন পরে সে আরফার বাবার কাছে কুস্তি খেলা শিখতে যায়। কিন্তু তাকে তিনি নিতে চাননা।
কুস্তি আসলে ফান না। খুবই সিরিয়াস একটি খেলা। আর শুধু শক্তি দিয়ে এটা খেলা যায় না। এর সাথে সবচেয়ে বেশি দরকার টেকনিক। এজন্য দরকার দিনের পর দিন কোচের অধীনে ট্রেইনিং।
অনেক রিকুয়েস্ট করার পর তার কোচ একজনের সাথে কুস্তি করতে অফার দেয়। সুলতান রাজি হয়ে লড়াইয়ে অংশ নেয় এবং সে জয়ী হয়।
এর পর থেকে শুরু হয় তার একের পর এক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া। এভাবে যেতে যেতে সে স্টেট লেবেল এ চ্যাম্পিয়ন হয়।
এবং আরফা নিজে এসে তার সাথে কথা বলে।
সুলতান তার নিজের ভালোবাসাকে পায়।
সুলতান নিজেকে কুস্তি খেলার জন্য উপযুক্ত করতে যে পরিশ্রম করেছে তা অনেকের ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা বা সাহস হিসেবে কাজে দিবে।
কঠোর পরিশ্রম এবং নিজের ইচ্ছা পূরনের জন্য কিভাবে লেগে থাকতে হয় তা সুলতান এর কাছ থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য খুবই ভালো একটি উদাহরন।
তবে সুলতান এর মধ্যে যে টেলেন্ট ছিলো তা এমনিতেই বেড়িয়ে আসেনি। আরফা যদি তাকে আক্রমন করে কথা না বলতো তাহলে কুস্তি বীর সুলতানের জন্ম হতো না।
তবে অনেকেই জীবনে চলতে চলতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বাক্যবাণ শুনে থাকেন। সেগুলো শুনে হয়তো অনেক মন খারপ হয়। অনেক কান্না পায়। এমনকি অনেকে কেদেও থাকেন।
কিন্তু সেই কথায় কোন পরিবর্তন হয় না। আসলে কখন যে কোন কথা কাজে দিবে, মানুষের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যাবে তা বলা যায় না।
যখন সুলতান আর আরফা ভালোভাবেই দিন কাটাচ্ছিলো তখন তার জীবনে নেমে আসে ট্রাজেডি।
আরফার ডেলিভারি কিছুদিন পরেই। আরফা তাকে রিকুয়েষ্ট করে সে যেন এবার দেশের বাইরে খেলতে না যায়। কিন্তু সুলতান না শুনে সেখানে যায়।
এদিকে আরফার ছেলে হয় কিন্তু অসুস্থ হয়ে পরে এবং ও নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোথাও খুজে ও নেগেটিভ রক্ত পাওয়া যায়নি এবং তার ছেলে মারা যায়।
অন্যদিকে সুলতান সেই প্রতিযোগিতায় জিতে মেডেল নিয়ে খুশি মনে আসে সন্তানের মুখ দেখার জন্য। এসে দেখে তার জীবনে কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
এবং আরফা নিজেও তাকে চলে যেতে বলে। কারন, সুলতানের রক্তের গ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’। যদি সুলতান দেশে থাকতো তাহলে সে রক্ত দিতে পারতো এবং তাদের ছেলে বেচে থাকতো।
আসলে কিছু মানুষের জীবনে ট্রাজেডি হয়ই যেন তাদের জীবনটা বদলে যায়। তাদের জীবনটা অন্য রকম।
জীবনকে মেশিনের সাথে তুলনা করা যায়না। ইচ্ছে হলে মেশিন স্টার্ট করলাম আর ইচ্ছে হলে আবার বন্ধ করে দিলাম।
আবার জীবনটা কারোর হাতের ঘুড়িও না যে কেউ তার ইচ্ছা মত ছাড়লো আবার কাছে টেনে নিয়ে আসলো।
মানুষের মন একবার কোন একটার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরলে সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা বা থামানো সম্ভব হয়ে উঠে না। আর এজন্যই মানুষের জীবন এতো বৈচিত্রময়।
অনেক টেলেন্ট যেমন আস্তে আস্তে শেষ হয়ে গেছে তেমনি অতি সাধারন একজনও দিনের পর দিন চেষ্টা করে উন্নতির চরম শিখরে পৌছেছেন।
আরফা যখন সুলতানকে তার যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছিলেন তখন যেমন সে কথার কোন লিমিট ছিলো না তেমনি সুলতান এখন কি করবে তারও কোন লিমিট নেই, হয়তো সুলতানের নিজের কাছেও জানা নেই।
মানুষ জীবনে চলতে গিয়ে কিছু ভালো কাজ যেমন করেন আবার তেমনি একটা বা দুইটা ভুল কাজও করেন। আর তার জন্য তাদের জনপ্রিয়তা যেমন কমে তেমনি সমালোচনার ঝড়ও উঠে।
কিন্তু সাধারন মানুষ সব সময় চায় তাদের প্রিয় মানুষ সব ভুলত্রুটির বাইরে থাকবেন। তারা বুঝতে চান না ভুলত্রুটি নিয়েই মানুষের জীবন।
আর তাই বুঝি আমাদের উপমহাদেশে গল্প, উপন্যাস, মুভির চরিত্রগুলোকে মহাপবিত্র রাখার চেষ্টা করা হয়।
সুলতানের জীবনেও ভুল ছিলো।
প্রেস স্টাফকে থাপ্পড় মেরেছিলো। তার জন্য তাকে সমালোচনা শুনতে হয়েছে।
তবে ডিরেক্টর আলী আব্বাস জাফর ভালো করেছেন যে সুলতাকে নিষ্পাপ বানানোর চেষ্টা করেননি।
এক্ষেত্রে জিনেদিন জিদানের কথা মনে করা যায়। খেলার মাঠে মাথা দিয়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে পেটে আঘাত করতে। সবাই জানতেন জিদান খুবই শান্ত প্রকৃতির, কিন্তু তিনিও মাঠে এমন একটি কাজ করেছেন যা দেখে সেদিন অনেকে অবাক হয়েছিলেন।
এটাই মানুষের জীবন।
ছেলেকে হারিয়ে এবং আরফা তার কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়ার পর সুলতান কুস্তি ছেড়ে দেয়।
একদিন অফার আসে রেসলিং খেলার জন্য। সে রাজি হয় না। কিন্তু অবশেষে সে রাজি হয়।
তার পেছনে কারন ছিলো, সুলতান একটি ব্লাড ব্যাংক খুলতে চায়। তার জন্য অনেক টাকার দরকার। তাই সে রাজি হয় রেসলিং খেলার জন্য এবং টাকা ইনকাম করার জন্য যে টাকা দিয়ে সে ব্লাড ব্যাংক খুলতে পারবে।
সুলতান এর মত মানুষদেরকে থামিয়ে দেওয়া যায়না।
হয়তো কিছু সময়ের জন্য জীবনে কিছু ছন্দ পতন হয়। কিন্তু একটা সময় পরে ঠিকই তারা আবার লড়াই শুরু করে দেয়। শুধু বদলে যায় প্লাটফর্ম।
কুস্তি খেলা থেমে গেলেও সমাজের মানুষের উপকারের কথা সে ভুলে যায়নি। ব্লাড ব্যাংক স্থাপনের জন্য শুরু করে আরেক লড়াই।
নিজে যে কষ্ট পেয়েছে তা যেন আর কাউকে না পেতে হয় সেজন্য সে তৈরি করতে চাচ্ছে ব্লাড ব্যাংক। যেটা আমাদের দেশে করছেন ইলিয়াস কাঞ্চন তার প্রিয় স্ত্রীকে হারিয়ে, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন।
কুস্তি আর রেসলিং এর মধ্যে অনেক পার্থক্য। আর কয়েক বছর হয়েছে কুস্তি খেলা ছেড়ে দিয়েছে তাই শরীরও আগের মত নেই। কিন্তু অনেক পরিশ্রমের ফলে সে আবার রেসলিং এ জিততে থাকে। এবং সে অনেক জনপ্রিয় হয়।
সুলতান এর একের পর এক সফলতার পিছনে যেমন আরফার কথার প্রভাব ছিলো তেমনি আরফার উপস্থিতিও প্রভাব ফেলতো।
সুলতান প্রতিবারই খেলার আগে আরফার সাথে কথা বলার জন্য মোবাইল হাতে নিতো কিন্তু কি মনে করে আবার রেখে দিতো। খেলায় যখন হেরে যাবে তখন আরফা তার কল্পনায় চলে আসতো।
আবার সে যেখান থেকে প্রথমে কুস্তি খেলা শিখে সেখান থেকে পেকেটে করে কিছু মাটি নিয়ে এসেছিলো। খেলার আগে সেই মাটি হাতে মেখে খেলতে যেতো। এগুলোই তার মনের শক্তি বাড়িয়ে দিতো। আর যার ফলে সে খেলায় জিততে পারতো।
সব সফলতার পেছনে কিছু শক্তি কাজ করে। সুলতান এর সফলতার পেছনেও এই দুইটি বিষয় কাজ করেছে।
যাই হোক, সালমান খান আর আনুশকা শর্মার প্রথম মুভি সুলতান এর সফলতা নিয়ে ইতোমধ্যেই মিডিয়াতে অনেক নিউজ এসেছে। অনেকেই বলছেন, এটা সালমান খানের নাম্বার ওয়ান মুভি।
No Comments