Travel

কেওক্রাডং

September 24, 2016
কেওক্রাডং

রাত দশটা পনের মিনিটে বাস ছাড়বে কলাবাগান কাউন্টার থেকে বান্দরবান এর উদ্দেশ্যে। বাস ছাড়ার তিন মিনিট আগে দৌড়ে বাসে উঠি।

এর আগে অফিস থেকে বের হই সাড়ে আটটায়। বাসায় আসতে আসতে সাড়ে নয়টা। ব্যাগ গোছানো হয়নি। তাড়াতাড়ি গোসল করে খাওয়া-দাওয়া সেড়ে বেগ গুছিয়ে দশটার পাচমিনিট আগে বাসা থেকে বের হই।

সাথে টাকা নেই। এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে বাস কাউন্টারে পৌছে দেখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। বাসে উঠি।

চোখ বুঝে থেকে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা বুঝতেই পারিনি। মধ্যে একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি বাস যাত্রা বিরতি দিয়েছে। বাস থেকে মানুষ নেমে পড়েছে। কয়েকজন আমার মত ঘুমাচ্ছে। আমি আর নামলাম না।

আবার চোখের উপর কম্বল টেনে ঘুমিয়ে পড়ি। একবারে সকালে বান্দরবান গিয়ে ঘুম ভেঙেছে। তখন সকাল সাড়ে সাতটা। আমার সাধারনত বাসে ঘুম হয় না। কিন্তু প্রচন্ড ক্লান্ত থাকার ফলেই হয়তো আমার এমন ঘুম হলো।

বাস থেকে নেমে অটোতে করে রুমা যাবার বাস স্টেশনে চলে আসি। এসে দেখি সাড়ে আটটার বাসে কোন সিট খালি নেই।

যেতে হলে হয় দাড়িয়ে নতুবা বাসের ছাদে করে যেতে হবে। আমার দুই সঙ্গী বাসের সাদে করে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। আমি আর আরেকজন নিচে দাড়িয়ে যাবো। চিন্তায় আছি সাড়া রাত জার্নি করে সাড়ে তিন ঘণ্টা আবার কিভাবে দাঁড়িয়ে যাবো।

বাসের সুপারভাইজার এসে বললেন, সেনাবাহিনীর মাছের বাক্সের উপর বসে যেতে পারবো। আমি প্রথমে রাজি হতে চাইলাম না। কারন মাছের গন্ধ আমার অসহ্য লাগে।

কিন্তু সুপারভাইজার বললেন, বাক্স এমনভাবে করা কোনো গন্ধ বের হবে না। রাজি হলাম। কিন্তু একজন বসা যাবে। আরেকজনকে দাড়িয়ে যেতে হবে অর্ধেক। মাঝ রাস্তায় একজন নামলে সেখানে বসা যাবে।

আমি বাক্সের উপর বসলাম। ঠাণ্ডা লাগছে। বরফ দিয়ে মাছ বাক্স করাতেই হয়তো ঠান্ডা লাগছে।

বাস চলতে শুরু করেছে। পাহাড়ের উপর দিয়ে আকা-বাকা, উচু-নিচু পেরিয়ে বাস রুমার উদ্দেশ্যে চলছে। একটু পরেই স্বর্ণ মন্দির দেখা গেল। অনেকক্ষণ ধরে দেখা যাচ্ছে। একটু একটু কুয়াশাও আছে পাহাড়ের গায়ে। তাই দূরের পাহাড় যাপসা যাপসা লাগছে। হালকা বাতাস বইছে।

মধ্যে দশ মিনিটের যাত্রা বিরতি দিয়ে বাস আবার চলতে শুরু করেছে। আমরা পাহাড় বেয়ে শুধু উপরের দিকে উঠেই চলেছি। দূরে তাকিয়ে পাহাড় দেখছি। আর ভাবছি এই পাহাড়ে মানুষ কত পরিশ্রম করে কলা, আনারস, পেপেসহ অন্যান্য ফসল ফলাচ্ছে। তারা কতটা কর্মট।

বাসের যাত্রীদের সাথে আস্তে আস্তে টুকটাক কথা হচ্ছে। কেউ যাবেন বগালেক আবার কেউ যাবেন কেওক্রাডং। সবাই এসেছেন দল বেধে। এর মধ্যে যেমন বন্ধু-বান্ধব আছেন তেমনি পরিবার মিলেও এসেছেন।

আমরা ঠিক করেছি, রুমা গিয়ে জীপে করে সরাসরি আজকেই কেওক্রাডং গিয়ে রাতে থাকবো। জীপে করে যাবো কারন, বগা লেকের পর চান্দের গাড়ি সাধারনত যেতে চায়না। কারন রাস্তা খুবই রিস্কি।

কথায় কথায় বাসের মধ্যেই ছয়জনের একটি দল পেয়ে গেলাম। তারাও কেওক্রাডং পর্যন্ত যাবেন। তারা আমাদের প্লান শুনে যুক্ত হতে চাইলেন। আমরা ভেবে দেখলাম একসাথে গেলে খারাপ হবেনা। দলে বেশি মানুষ থাকলে আনন্দ যেমন হবে তেমনি খরচও কমে যাবে। তাদেরকে সাথে নিতে রাজি হলাম।

দেখতে দেখতে রুমা চলে আসলাম।

বাস স্টপে নেমেই চান্দের গাড়িতে উঠে রুমা বাজার গেলাম। সেখানে গিয়ে আর্মি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করে আমাদের কেওক্রাডং যেতে হবে। এভাবে কিছুদূর পর পর নাম এন্ট্রি করে কেওক্রাডং পৌছাতে হবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমা বাজার চলে গেলাম। সেখানে আগে থেকেই আমাদের গাইড জীপ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। আমরা ঢাকা থেকেই ফোনে সব ঠিক করে রেখেছিলাম যাতে করে আমাদের ভ্রমণে কোন সময় নষ্ট না হয়।

আর্মি ক্যাম্পে গেলাম। আমাদের গন্তব্য জানতে চাইলেন। আমরা বললাম, আজ রাতে কেওক্রাডং গিয়ে থাকবো। তারপর আগামীকাল সেখান থেকে জাদিপাই ঝর্ণা দেখতে যাবো।

আর্মির সদস্য বললেন, জাদিপাই পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। নিষেধ আছে। সিকিউরিটির প্রবলেম।

আগেই গাইড আমাদের নিরাশ করেছিলেন। জাদিপাই যাওয়া যাবে না। তারপর যখন অনুমতি পাওয়া গেলো না তখন সবার মন খারাপ হয়ে গেল।

আমাদের এক সদস্যের বন্ধু আর্মিতে আছেন। সে তাকে ফোন দিলেন। কোন কাজ হলো না। মন খারাপ করে আর্মি ক্যাম্প থেকে নেমে আসি।

রুমা বাজারে দুপরের খাবার খেয়ে ঠিক করা জীপে উঠে পড়ি আমাদের গাইড আনোয়ারের সাথে। লম্বা, পাতলা চেহারার আনোয়ার কথা বলেন ভাঙা ভাঙা গলায়। সামনে ড্রাইভারের সাথে দুইজন বসার জায়গা আছে। আমি সামনে গিয়ে বসলাম।

ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বের করে হাতে নিলাম। জানালা দিয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ক্যামেরা ক্লিক করছি। ছবি উঠছে।

ড্রাইভারের সাথে কথায় কথায় জানলাম তার নাম সবুজ। বাড়ি পটুয়াখালি। অল্প বয়সে বাবা মারা যায়। তারপর সংসারের দায়িত্ব পড়ে তার উপর। ভাই-বোনদেরকে নিয়ে চলে আসে বান্দরবান। এসে চান্দের গাড়ি চালানো শিখে। তারপর থেকে এখানেই আছে।

ষোল বছর ধরে সে চান্দের গাড়ি চালাচ্ছে। আমাদেরকে যেই জীপ গাড়িতে করে এখন নিয়ে যাচ্ছে তা পেয়েছে কয়েক মাস আগে। সে এই গাড়ি পেয়ে খুশি। কারন গাড়িটা ভালো।

দেখতে দেখতে বগা লেক চলে এসেছি।

গাড়ি থেকে নেমেই আবার আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে নাম এন্ট্রি করতে হলো। নাম এন্ট্রি করে সবাই ছবি তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। সবাই সেলফি তুলছেন।

আমাদের গাইড গাড়িতে উঠার জন্য তাড়া দিচ্ছেন। কারন বেলা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। সন্ধ্যার আগেই কেওক্রাডং পৌছাতে হবে। আর আমরা ফেরার পথে যেহেতু বগালেকে নাইট স্টে করবো তাই গাইড সবাইকে তাড়া দিচ্ছেন।

আমরা আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। এবার শুরু হলো আরো বিপদজনক রাস্তায় চলা। পাহাড়ের রাস্তায় ধুলার স্তরের উপর দিয়ে খাড়াভাবে গাড়ি উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে।

আমার ভিতরে একটু ভয় ভয় শুরু হয়ে গেছে। মনে আসছে যদি গাড়ি একবার এই পাহাড় থেকে স্লিপ করে তাহলে আর কাউকে খুজে পাওয়া যাবে না।

সবাই উত্তেজনায় চিৎকার করছে। আমিও মাঝে মাঝে তাদের সাথে গলা মিলাচ্ছি। ফাকে ফাকে ছবিও তুলে নিচ্ছি। খাড়া রাস্তার ছবি, দূরে পাহাড়ের গায়ে দুই একটা বাড়ির ছবি। আর সবুজের সাথে কথা বলছি।

সবুজ খুব আত্নবিশ্বাসের সাথে গাড়ি চালাচ্ছে। এই রাস্তার প্রতিটা বাক যেন তার চেনা। কোথায় গিয়ে কিভাবে টার্ন নিতে হবে সবই যেন তার মুখস্ত।

তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে একদম শান্ত। আমরা উল্লাস করে গেলেও তার কোন বিকার নেই। মাঝে মাঝে তার ঠোটের কোনে হালকা হাসির রেখা দেখা যায়। আবার সাথে সাথেই তা যেন মিলিয়ে যায়। মনে হচ্ছে তার মনের মধ্যে কোথায় যেন একটা কষ্ট আছে।

আমি তাকে বললাম, সবুজ আমার ভয় করছিলো ঠিকই। কিন্তু তোমার গাড়ি চালানো দেখে আমার ভয় সত্যি কেটে গেছে। এই কথা শুনে সে বড় করে হাসি দেয়। কোন শব্দ নেই সেই হাসির।

সে আমার সাথে তার মনের কথা বলে যায়। তার মনের জমানো সুখ-দুখের কথা। তার পরিবারের কথা। তার ভাই-বোনদের লেখাপড়া করানোর কথা।

তার স্বপ্নের কথা।

সে এমনভাবে কথা বলছে যেন আমি তার অনেক দিনের পরিচিত। আমি নিরবে তার কথা শুনে যাচ্ছি আর ক্লিক করে যাচ্চি। সেও বুঝে যাচ্ছে আমি কিসের কিসের ছবি নিচ্ছি। তখন সে গাড়ির গতি কমিয়ে দিচ্ছে যাতে করে আমি ছবি নিতে পারি। খুব ভালো লাগলো তার এই সহযোগিতা দেখা।

আমরা দার্জিলিং পাড়া পেরিয়ে কেওক্রাডং এর উপর চলে এসেছি। সবুজকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তার ফোন নাম্বার নিলাম। সে বলল, ভাইয়া আবার যদি আসেন তাহলে ফোন দিলে আমি গাড়ি নিয়ে হাজির হয়ে যাবো।

আমরা সবাই হইহোল্লোড় করে গাড়ি থেকে নেমেই কেওক্রাডং এর সিড়ি বেয়ে পিক এ উঠলাম। যদিও গাড়িতে করে উঠেছি তবু ভালো লাগছে কেওক্রাডং এর উপর উঠতে পেরে।

আজ রাতে থাকবো লালমুন থান বম এর বাড়িতে।

দোতলায় আমরা দুইটা রুম নিয়েছি। প্রতিজনকে মাথাপিছু একশত টাকা দিতে হবে। রুমে গিয়ে দেখলাম, কাঠের মেঝে তোশকের উপর চাদর বিছিয়ে রাখা আছে। খারাপ লাগলো না। যতটা চিন্তায় ছিলাম ততটা খারাপ না।

কাপড় চেইঞ্জ করে কাঠের সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম গোসল করার জন্য। কিন্তু হতাশ হলাম। কিছু পানি রাখা আছে শুধু হাত মুখ ধোয়ার জন্য। গোসল করতে হলে ফেলে আসা দার্জিলিং পাড়ায় যেতে হবে। সেখানে ঝিরি আছে। সেখানে গোসল করা যাবে। মাথায় আসেনি এতো উপরে পানি পাওয়াটা স্বপ্নের মতো।

আমরা চারজন গেলাম না। বাকি ছয় জন গেলেন।

আমি শ্যাম্পু দিয়ে শুধু মাথাটা ধোয়ে নিলাম। বালিতে চুল যেন ঝট লেগে গেছে। মাথা ধোয়ে গামছা বিজিয়ে শরীরটা মুছে নিলাম। হালকা গোসল হয়ে গেল। হালকা লাগছে।

উপরে চলে এলাম। ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু খাবার হবে রাতে। এখন কোন খাবার নেই। ভাত খেতে ইচ্ছে করছে। সাথে আনা বিস্কুট, শুকনা চিড়া, পানি খেয়ে রেস্ট নেয়ার জন্য একটু শুয়ে থাকলাম।

আধা ঘন্টা রেস্ট নিয়ে পাচটার সময় ক্যামেরা নিয়ে কেওক্রাডং এর চূড়ায় উঠলাম। নিচে উত্তর দিকে দেখা যাচ্ছে দার্জিলিং পাড়া। আর দক্ষিণ দিকে পাসিং পাড়া। পাসিং পাড়া পেরিয়েই আমাদের জাদিপাই ঝর্ণা যাওয়ার কথা ছিলো। ভিতর থেকে একটা নিঃশ্বাস বের হয়ে এলো।

আবার ছবি তোলায় মন দিলাম। পাশেই আর্মিদের তৈরি করা হেলিপ্যাড জরুরী অবতরনের জন্য। সেখানে গেলাম। সেখানে গিয়ে কেওক্রাডং এর ছবি নিলাম। লালমুন থান বম এর একটা বাড়ির ছবি নিলাম। দেখতে দেখতে সূর্য পশ্চিম আকাশে পাহাড়ের নিচে চলে গেল।

বাতাস এর গতি বেড়ে গেছে। আসতে আসতে বাতাস ঠান্ডা লাগছে। হেলিপ্যাডে শুয়ে আছি। আকাশে অর্ধ চাঁদ দেখা গেল। খুব ভালো লাগছে। হঠাত মনটা কেন জানি বিষণ্ন হয়ে গেল। একটু পরে নেমে এলাম সেখান থেকে।

রাতের খাবার দেওয়া হয়েছে। খাওয়ার জন্য ঢাকছেন গাইড আনোয়ার। নিচে নেমে এলাম।

লম্বা টেবিল। তার দুই পাশে লম্বা ব্যাঞ্চ। ভাত, আলু ভর্তা, ডিমের ঝোল আর ডাল। ভাতে হাত দিয়ে দেখি ভাত যেন শুকিয়ে গেছে। অল্প করে ভাচ নিলাম। আলু ভর্তা, ডিমের তরকারি, ডাল সবই একটু ঝাল ঝাল লাগছে। আর হলুদের পরিমানটা বেশি মনে হলো। ক্ষুধা ছিলো বিকেল থেকেই। তাই কষ্ট করে খেয়ে নিলাম।

লালের সাথে এখানে থাকেন তার স্ত্রী, বড় ছেলে। সে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে বিয়ে করেছে। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েটাকে ঢাকাতে পাঠিয়ে দিবে চাচার কাছে পড়ালেখা করার জন্য।

লালের ছোট ছেলে ঢাকাতে মাইলস্টোন স্কুলে পড়ে। মাসে লাল তাকে বিশ হাজার করে টাকা দেয়। বছরে দুইবার লালের কাছে বেড়াতে আসে। সে এখানে বেশি আসতে চায়না। লালের বড় ছেলেও এখানে থাকতে চায়না। কিন্তু এখানে যে পর্যটকরা আসেন তাদের দেখাশুনার জন্য লাল একা পেরে উঠেন না। তাই তাকে এখানে বাবাকে সাহায্য করার জন্য বাধ্য হয়ে থাকতে হয়।

লালের ছোট ছোট দুই নাতি একসাথে সারাক্ষণ খেলা করে। যেহেতু তাদের আর কোন প্রতিবেশি নেই তাই তারা দুইজনেই খেলা করে। তবে তাদের সাথে মাজে মাজে যোগ দেয় কুকুর। কয়েকটা কুকুর আছে এখানে। তারাও তাদের সঙ্গ দেয়। আর প্রতিনিয়ত পর্যটকরা আসছে যাচ্ছে। তাদেরকে তারা দেখতে পাচ্ছে।

আমরা লালের সাথে সবাই মিলে কথা বলছি। হঠাৎ করে আমার পেটে ব্যাথা অনুভব করলাম। বুঝতে পারলাম শক্ত ভাত খাওয়ার ফল।

কাউকে কিছু না বলে উপরে চলে এলাম। ব্যাগে রাখা এন্টাসিড প্লাস আর একটা ফ্ল্যাজিল খেয়ে আবার নিচে নেমে আসলাম।

নিচে নামার সময় মনে হচ্ছিলো, এখানে যদি কারো কখনও ডায়রিয়া বা অন্য কোন গুরুতর অসুখ হয় তাহলে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নেওয়ার কোন উপায় নেই। তখন তারা কি করেন এই কথা ভাবতে ভাবতে নিচে নেমে এসে দেখি বার-বি-কিউ করার জন্য আগুন জালানো হয়েছে।

আসার সময় রুমা থেকে দুইটা মুরগি নিয়ে আসা হয়েছে। রুমার পরে আর মুরগি পাওয়া যায়না। আমরা সবাই আগুনের চারপাশে বসে দেখছি। আস্তে আস্তে রাত যত গভীর হচ্ছে শীতের তীব্রতা ততোই বেড়ে চলেছে। তাই আগুনের পাশে বসে থাকতে ভালোই লাগছে। আকাশে এখনো চাঁদ আছে। আর তার সাথে সারা আকাশের অসংখ্য তারা তার মিটিমিটি আলো ছড়াচ্ছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বার-বি-কিউ হয়ে গেলে আমরা উপরে চলে আসি। সকালে সূর্য উঠা দেখতে হবে তাই খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি।

রাতে এতো শীত ছিলো যে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। শীতের কারনে কিছুক্ষণ পর পরই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। দুইটা কম্বল নেয়ার পরও শীত কমেনি।

এতো শীত ছিলো যে ভোরে গায়ে কম্বল নিয়ে কেওক্রাডং এর চূড়ায় উঠতে হয়েছে। উপরে উঠে দেখি আমার আগে আরেকজন গায়ে কম্বল জড়িয়ে সূর্য দেখার জন্য দাড়িয়ে আছেন। কুয়াশার কারনে সূর্য দেখা যাচ্ছে না।

বাতাসের কারনে শীতের পরিমান আরো বেশি লাগছে। কিছুক্ষণ পড়ে পাহাড়ের উপর দিয়ে সূর্যকে উকি মারতে দেখা গেল। কিন্তু আবার মিলিয়ে গেল।

আমাদের অপেক্ষার পালা আবার শুরু হলো। এবার বেশ খানিকটা সময় পরে সূর্য উঠল। লাল সূর্য। আস্তে আস্তে কুয়াশা কেটে যাচ্ছে। আলোর তীব্রতা বাড়ছে। শীত কমতে শুরু করেছে। আমরা ছবি তুলে নিচে নেমে আসলাম।

নিচে নেমে দেখি লালের বড় ছেলের বউ হাতে চাদর বুনছে। এই চাদর সে পর্যটকদের কাছে চারশত টাকা করে বিক্রি করে। কাজের ফাকে ফাকে সে এই চাদর বুনে।

হাত-মুখ ধোয়ে সকালের খাবার খাওয়ার জন্য নামলাম। খিচুড়ি সাথে ডিম বাজা। খুব ভালো লাগলো। খাওয়া শেষ। আমাদের কিছুক্ষণ পরই এখান থেকে বিদায় নিতে হবে।

ব্যাগ গুছুয়ে নিচে নেমে এলাম। হাতে সবাই বাঁশ নিয়ে নয়টা পাচ মিনিটে বগা লেক এর উদ্দেশ্যে আমাদের ট্রেকিং শুরু হলো।

গুডবাই কেওক্রাডং।

You Might Also Like

No Comments

Leave a Reply

error: Content is protected !!